সরিষা ফুলের মধু ( CREAM HONEY ) বা ক্রিস্টাল হানি। বাংলাদেশে শীতকালে অর্থাৎ (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) মাসে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহ করা শুরু হয়। বাংলাদেশে বিশেষ করে রাজশাহী, সাতক্ষীরা, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলা সরিষা ফুলের মধুর জন্যে বিখ্যাত। কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৭৫ টন সরিষা ফুলের মধু উৎপাদন হয়। সরিষা ফুলের মধু সাধারণত শীতকালে জমে যায়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে সরিষা ফুলের মধুতে গ্লকোজ ও ফ্রুক্টোজ এর পরিমাণ তুলনামূলক বেশি থাকে। আর এই জমে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে হানি ক্রিস্টালাইজেশন ( Honey Crystalization ) বলে। সরিষা ফুলের মধু জমে গেলে এটি ক্রিমের ন্যায় আচরণ করে এবং এই ক্রিম হানিকে ক্রিস্টাল হানি ( Crystal Honey ) বলা হয়। ক্রিস্টাল হানি যেকোনো খাবারের সাথে রুটি, বিস্কুট কিংবা সকালের নাস্তার সাথে নিলে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টি আরো বাড়িয়ে দেয়।

ক্রিম হানি বা ক্রিস্টাল হানির স্বাস্থ্য উপকারিতা গুলো হলো :

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি :

• সরিষা ফুলের মধুতে প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এবং সর্দি, কাশি বা ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর।

ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিরাময় :

ঠান্ডা আবহাওয়ায় সরিষা ফুলের মধু বা ক্রিম হানি নিয়মিত খেলে শরীরকে উষ্ণ রাখে এবং ঠান্ডাজনিত অসুস্থতা কমাতে কার্যকর। এটি শ্বাসতন্ত্রকে শীতল থেকে সুরক্ষিত রাখে।রক্তস্বল্পতা দূর করে :

• সরিষা ফুলের মধু আয়রনের ভালো উৎস, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এটি রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া দূর করতে সহায়ক।

শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় উপকারী :

• ১ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের সরিষা ফুলের মধু খাওয়ানো হলে ঠান্ডা, কাশি এবং সংক্রমণ রোগ প্রতিরোধ হয়। এবং এটি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করে :

• সরিষা ফুলের মধু বা ক্রিম হানিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।

সর্দি-কাশি ও গলা ব্যথা নিরাময় :

• সরিষা ফুলের মধুতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যে গুলোর কারণে ঠান্ডা, কাশি বা গলা ব্যথা উপশমে অনেক কার্যকর। এটি লেবু বা আদার সাথে মিশিয়ে খেলে দ্রুত আরাম পাওয়া যায়।

ওজন কমাতে সহায়ক :

• গরম পানির সাথে সরিষা ফুলের মধু মিশিয়ে খেলে তা মেটাবলিজম বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। এবং এটি প্রাকৃতিকভাবে চর্বি কমাতেও সাহায্য করে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে :

• সরিষা ফুলের মধুতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল ক্যানসার সৃষ্টিকারী ফ্রি র‌্যাডিক্যাল দূর করে। এটি কোষের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং টিউমার বৃদ্ধির ঝুঁকি কমায়।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি :

• সরিষা ফুলের মধু স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। এটি আলঝেইমার্স এবং অন্যান্য নিউরোডিজেনারেটিভ রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী :

• সরিষা ফুলের মধু হলো প্রাকৃতিক মিষ্টি, যা সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। এটি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে পরিমিত পরিমাণে গ্রহণের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

ত্বক এবং চুলের যত্নে উপকারী :

• ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে সরিষা ফুলের মধু একটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ব্রণ ও ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। চুলের মজবুতিতে সহায়ক এবং স্ক্যাল্পের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।

হাড় ও জয়েন্টের সুস্থতা বজায় রাখে :

• সরিষা ফুলের মধু বা ক্রিম হানি ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় হাড়ের ঘনত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি আর্থ্রাইটিস এবং গেঁটেবাতের ব্যথা কমাতেও অনেক কার্যকর।

রক্ত পরিষ্কার করে :

• সরিষা ফুলের মধু প্রাকৃতিকভাবে রক্ত থেকে টক্সিন দূর করে। এটি রক্ত প্রবাহকে উন্নত করে এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায়।

চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী :

• সরিষা ফুলের মধুতে থাকা ভিটামিন এ চোখের দৃষ্টি উন্নত করতে সহায়তা করে। এটি নিয়মিত খেলে চোখের ক্লান্তি কমায় এবং রেটিনার স্বাস্থ্য বজায় রাখে।

: